Night Sky
Posted by: Sukher Chador

চাঁদ ওঠে নিয়মিত সবারই আকাশে রাত শেষে দিন হয় !!

আমি জানিনা সে ত্যক্ত পথ চলেছে কেমন
আমি জানিনা সেখানে বাস করে ঠিক কতজন
জানিনা ক জোড়া হাত মুঠি খুলে আছে
জানিনা কত রাত শীতের কামড়ে কেটে গেছে

জানি শুধু কোনও পথই সোজাসুজি নয়
কোনও পথ ছায়ার আদরে, কোনও পথ রোদে জ্বলে যায়
কোনও হাত সুকোমল, উপচানো মুঠি
কোনও হাতে ক্ষুধার্ত পৃথিবীর বাটি

চাঁদ ওঠে নিয়মিত সবারই আকাশে
রাত শেষে দিন হয়, পাকস্থলী উৎসেচক নির্মোচে
অপর্যাপ্ত কারও প্রাপ্তি, ডাস্টবিনে উদ্বৃত্ত পাহাড়
ঘেঁটে তুলে আনে কোনও মানব মুকুল, দিনের আহার।

কি হয় যদি একমুঠো, হাঁড়ি থেকে দিই কারও পাতে
কি এমন কম পড়ে তাতে !
আশ্রয়হীনা কিংবা হীন, অভুক্ত ছিন্ন আবরন,
ব্রাত্য করে রেখেছে সমাজ, সারা দেহে শৈত্যের কাঁপন।

নিরন্ন গেরস্থালি, নির্বাপিত চূলা। এড়াতে পার যদি দায়
পরিত্যগ করো তবে আবাস তোমার, সে ক্ষয়াটে হৃদয়।

‘সুখের চাদর’ এর সাথে আমার পরিচয় ফেসবুক বন্ধু শ্রী সন্দীপ কুমার দাস এর মাধ্যমে। তখন সন্দীপ ‘যাযাবর যাযাবর’ নামে ফেসবুক এ নিয়মিত গাছ, পাতা, ফুল নিয়ে লিখত। আমি তার অন্যতম পাঠিকা ছিলাম। প্রথম শাল শিশু চিনি যাযুর পোস্ট এর ছবিতে। তারপর তো পলাশ, কনকচূড়া, অমলতাস, তমাল আরো কত কত গাছ, কত অজানা অচেনা ফুলের সাথে চেনা জানা .. .. আজও যা একই ভাবে অব্যাহত রয়েছে।

সেই সময়ই যাযুর একটি পোস্ট এ জানতে পারলাম যাযাবর পাখিরালয় এর কথা। এই দলটির সদস্যরা সব পরিচিত বিভিন্ন পাখির নামে। দারুণ ব্যাপার। এদিকে গাছ পালা ফুল … অন্য দিকে পাখি আর পাখিদের নামের আড়ালে এক ঝাঁক মানবিক মুখ। ব্যাস, যাযাবরের পদক্ষেপের অনুসারী হয়ে পড়লাম। ওরা তখন কুমলাই এর বন্ধ চা বাগানের অনাহারে থাকা শ্রমিক পরিবারগুলির জন্য অনুদান সংগ্রহ করছে। মানবিক আবেদন রাখছে ফেসবুক এ পোস্ট এর মাধ্যমে। যাযু ছাড়া আর কাউকে চিনতাম না তখন। আমার লেখনীও কিছু শব্দ গাঁথতো। যাযুর পোস্টের কমেন্টস এ তা উপস্থাপনা করলেই যাযু সেটি সঙ্গে সঙ্গে মূল পোস্টে জুড়ে দিত। কুমলাই যেতে পারিনি আমি কিন্তু মনটা ওদের সাথেই ছিল। ছবিতে একে একে চেনা নামগুলো খুঁজে নিলাম। ফিরে আসার পর যাযু আমাকে জুড়ে নিল দলে। নতুন নাম হল ‘সুখের চাদর’। আমি তার একগাছা গর্বিত সূতো। মানসিক ভাবে জড়িয়ে গেলাম সুখের চাদরের কাজে।

প্রথম আমি সুখের চাদরের কাজে গেলাম শান্তিনিকেতনে। সেখানে অন্যভুবনের ‘ সবুজ পাঠ মুক্ত বিদ্যালয়ের ‘ আদিবাসী শিশুদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী এবং অনুদান নিয়ে। ট্রেনে যখন দেখা হল ‘সুখের চাদরের’ সবার সাথে মনেই হল না এটাই প্রথম। ততদিনে সবাই আপনজন হয়ে গেছে। একটা সুবৃহৎ পরিবার যেন আমাদের। হাসি মজা আনন্দ আবার প্রত্যেকটি কাজ নিপুণ হাতে সম্পন্ন করা। সবাই সবার সুখ সাচ্ছন্দ্য সুবিধা অসুবিধার প্রতি নজর রাখা। ছোটরা বড়রা সব মিলিয়ে এক একটা দারুণ আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকা।

সুখের চাদরের সাথে যে কটি কাজে আমি এখন পর্যন্ত গেছি তার প্রত্যেকটি আমাকে শিখিয়েছে আত্মনীরীক্ষন এবং উত্তরণ। কোর কমিটির সদস্যদের কি অসম্ভব নিষ্ঠা এবং আত্মনিয়োগ অতি ক্ষুদ্র কাজটিকেও সর্বোত্তম করে তোলার জন্য তা চাক্ষুষ না দেখলে বোঝা যায় না।

যাদের কিচ্ছু নেই, সন্তানের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দিতে পারে না, শতচ্ছিন্ন পরিধেয়, মাথার ওপরে ছাদ নেই, তাদের তুলনায় তো আমরা অনেক ভালোতে বাস করি। আমাদের শিশুর অপর্যাপ্ত পরিধেয়, দুবেলার নিশ্চিত আহার, তাপমাত্রার উঠা নামার প্রাবল্য কষ্ট দেয় না, একটার জায়গায় তিনটে ব্যাগ, পাঁচটা পেন্সিল বাক্স … মুঠিগুলোকে একটু সংকুচিত করে উদ্বৃত্তটুকু আমরা পারিনা ওই শিশুগুলোর হাতে, অসহায় মানুষগুলির হাতে পৌঁছে দিতে ? তারা তো আমাদেরই প্রতিবেশী। আমার পাশের ঘরের মানুষটি যদি নিরন্ন, বস্ত্রহীন থাকে তাহলে আমি কি করে পারি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতে ! আমাদের সন্তানের কাছেই বা কি বার্তা পৌঁছবে আমাদের ভূমিকার !

সুখের চাদর মানুষকে শুধু একটু মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানায়। যে যেখানে আছে সেখানে থেকেই যে যার নিজের মতো করে শুধু একটু চারপাশে চোখ রাখুক। একটি ক্ষুধার্ত পেটও যদি আমাদের কারও একমুঠি ভরাতে পারে, একটি অসহায়, অসুস্থ শিশুকেও যদি আমাদের সম্মিলিত সাহায্যে আমরা বাঁচিয়ে তুলতে পারি তবে নিশ্চিত জানব আর একটি মানুষের জন্যও আরও কিছু দরদী হাত নিশ্চয়ই এগিয়ে আসবে।

সোমা